অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রায় ১০ হাজার গরিব গ্রাহকের গড়ে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে ইনসাফ মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেড।
ওই এলাকার সবজি বিক্রেতা, গৃহকর্মী, রিকশাচালক, দারোয়ান, ভিক্ষুক ও মেঘনার পাড়ের জেলে পল্লীসহ দরিদ্র গ্রাহকের কাছ থেকে এ টাকা সংগ্রহ করা হয়। টাকা ফেরতের দাবিতে আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন পাঁচ মাঠ কর্মী।
তাদের মধ্যে আমেনা বেগমের মামলা রায়পুর থানায় রেকর্ড করার নির্দেশ এবং অপর মাঠকর্মী ফাতেমা, মাকসুদা, খুরশিদা ও কুলসুমা বেগমের মামলাটি জেলা গোয়েন্দা সংস্থাকে (ডিবি) তদন্ত করে চার কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রায়পুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক।
রোববার দুপুরে দুই মামলায় জেলার ডিবির এসআই আবু তাহের ও রায়পুর থানার এসআই কমল দে তদন্তের জন্য উত্তর চরবংশী ইউপির হাজারিপাড়া এলাকায় গেলে কয়েকশ’ গ্রাহক বিক্ষোভ করেন।
অভিযুক্ত এনজিও ইনসাফ কোম্পানির ঢাকার মিরপুরের কল্যাণপুর, ৩৩৮/১ দক্ষিণ পাইকপাড়ায় তাদের প্রধান কার্যালয়। যার সরকারি রেজিষ্ট্রেশান নাম্বার-সি ১২৬৩৬৭। গত ৮ বছর তারা রায়পুরের বিভিন্ন ইউপিতে অস্থায়ী কার্যালয় খুলে প্রতারণা করে বিভিন্ন মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
উত্তর চরবংশী ইউপির গ্রাহকরা জানান, সমিতি প্রতি বই বাবদ ২০০ থেকে ২০, ২৫ ও ৩০ হাজার টাকা সঞ্চয় রাখা ও তার শেয়ার হিসেবে বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় দশ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই প্রতারক কোম্পানি।
জেলে পল্লীর গৃহবধু আমেনা বলেন, “স্বামীর অগোচরে দ্বিগুণ লাভের আশায় সঞ্চয় করে ৩৩ হাজার টাকা জমা করি। বুধবার সকালে খাসেরহাট বাজারের পাশে আরকে ভবনে এসে দেখি অফিস তালা মারা। বহু কষ্ট করে স্বামী নদীতে মাছ ধরার টাকায় সংসার চলে। ভাবলাম, সমিতিতে টাকা রেখে দোকান দিবো। এখন সব টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমাদের টাকা ফেরত চাই এবং এদের কঠিন বিচার চাই।”
গৃহকর্মী মমতাজ বেগম ও হালিমা বেগম বলেন, “আমাদের কাছে সমিতির কয়েকজন লোক গিয়ে বলেন গরিবদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটা সঞ্চয় সমিতি করা হয়েছে। ২০০ থেকে ২০ হাজার টাকা জমা দিলে তিন বছর পর দ্বিগুণ দিবে। এখন পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় নেই।”
পুরো রায়পুর উপজেলার ১০টি ইউপির বিভিন্ন এলাকার এসব দরিদ্র গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ইনসাফ মার্কেটিং কোম্পানি। চার প্রতারক রায়পুর পৌরসভার মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন, চতাইল্লা দিঘিরপাড় এলাকার জয়নাল ও তাদের পার্টনার ভোলা শহরের আমিরুল ইসলাম ও জুয়েলকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গ্রাহকরা বিক্ষোভ করেছেন।
কোম্পানির মাঠকর্মী আমেনা বেগম ও ফাতেমা বলেন, চরবংশী ইউপিতে আমাদের মতো আরও ১৭ জন মাঠকর্মী রয়েছেন। আমাদের দেড়শ’ সদস্যের প্রায় দশ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। বুধবার দুপুর থেকে কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার নাজিম উদ্দিন ও জয়নালের ফোন দিয়ে পাচ্ছি না। তারা ফোন নম্বর বন্ধ রেখেছেন। চেয়ারম্যানের নম্বরে ফোন দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
আরকে ভবনের মালিক হোমিও ডাক্তার আবদুর রশিদ বলেন, কোম্পানির কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে ৮ হাজার টাকা মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দেই। তারা গত তিন মাস আগে বাসা ও দোকান ভাড়া নেয়। এক মাস ভাড়া দিলেও গত দুই মাস দেব-দিচ্ছি করে এখনও দেয়নি। এ মাসের শুরুতে চাপ দিলে তারা আজ টাকা দেওয়ার তারিখ দিয়ে ছিলেন। এভাবে তালা মেরে পালিয়ে যাবেন জানা ছিল না। আমার কাছে তথ্য নিয়ে গেছে পুলিশ।
অভিযুক্ত কোম্পানির উপজেলা ম্যানেজার নাজিম উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেনি। অন্য তিন প্রতারকের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে রায়পুর থানার এসআই কমল দে ও ডিবির এসআই আবু তাহের বলেন, এঘটনায় আদালতে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। তা তদন্ত করে যথাসময প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাস বলেন, এবিষয়ে কেউ কিছু জানাননি। এনজিও সভায় সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply